প্রকাশ: ২০১৭-১০-২১ ২২:৫১:৩৮ || আপডেট: ২০১৭-১০-২২ ১০:৫৫:৫৭
স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের সাথে কার্তিকের প্রথম সপ্তাহের ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শিকার হলো বন্দরনগরীর বেশ কিছু এলাকা।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকেই চট্টগ্রামের আকাশ কালো মেঘে ঢাকা ছিল। এতে সারা দিনই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে ছিল ঠাণ্ডা বাতাস। তাই আজ (শনিবার) ছুটির দিন হওয়ার পরও কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন নগরবাসী।
নিম্নচাপের প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে চট্টগ্রামে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়, যা আজ (শনিবার) বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে ঝরেছে। শনিবার সন্ধ্যার দিকে আকাশ কালো করে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। এতে প্লাবিত হয় নগরীর বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল।
নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক, বেপারিপাড়া, শান্তিবাগ, ছোটপোল, পশ্চিম নিমতলা, বারিক বিল্ডিং মোড়, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, কাপাসগোলা, বহদ্দারহাট তালতল, ফরিদার পাড়া, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, পশ্চিম মাদারবাড়ি, সিডিএ আবাসিক এলাকা, মুহুরি পাড়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এবং বাকলিয়া ও হালিশহরের কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
আশি লাখ মানুষের এ শহরে পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন হয় চাকতাইসহ অর্ধশতাধিক খাল দিয়ে। কিন্তু অবৈধ দখল, ভরাট আর বর্জ্যে বোঝাই এসব খাল ভারি বৃষ্টি হলেই আর পানি সরাতে পারে না; সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
শনিবার সন্ধ্যায় ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শিকার হলো বন্দরনগরীর বেশ কিছু এলাকা।এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে pic.twitter.com/Z8bS5RJ703
— Mosrur Zunaid (@MosrurZunaid) October 21, 2017
এদিকে, সন্ধ্যার বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসফেরত নগরবাসী। এসময় সড়কে যানবাহন কম থাকায় বাসায় ফিরতে তাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। যানবাহন না পেয়ে অনেকে বাসায় ফিরেছেন বৃষ্টিকে ভিজে হেঁটে হেঁটে।
নগরীর সিইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত মিজানুর রহমান বলেন, ‘অফিস শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছি। বৃষ্টির কারণে সড়কে যানবাহন চলাচল কম থাকায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে এসময় অনেকে বৃষ্টিতে ভিজে যান।’
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১১৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল থেকে থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রবিবার সকাল পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট নিম্ন বায়ুচাপের কারণে আবহাওয়ার তারতম্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালা তৈরি হয়েছে। নিম্নচাপটি টাঙ্গাইল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে, এটি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্নয়ে দুর্বল হয়ে যাবে।’
বরাবরের মতো এই বৃষ্টিতেও ডুবেছে নিতপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকা।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, “গতকালের চেয়ে আজ পানি বেশি হয়েছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে নারিকেল, পেঁয়াজ ও ভুষিমালের বেশ কিছু গুদাম ও আড়তে পানি ঢুকেছে। চলতি বছর বর্ষায় ঘনঘন পানি উঠায় অনেকে পানি ঠেকাতে দেয়াল তুলেছিল। তাই সব গুদামে পানি ঢোকেনি। পানি নামার পর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানা যাবে।”
সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর বেশিরভাগ এলাকাতেই পানি ছিল হাঁটুর নিচে। তবে সন্ধ্যার পর নিয়মিত বিরতিতে ভারি বৃষ্টি হচ্ছিল।
নিম্নচাপের কারণে উত্তাল সাগর। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত নিম্নচাপের কারণে উত্তাল সাগর। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত নিম্নচাপের কারণে পতেঙ্গায় জোয়ারের পানি বাঁধের পাথর উপচে সৈকতেরাঅস্থায়ী দোকানগুলোতে ঢুকে পড়ে।
বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে থাকা জাহাজগুলোতে পণ্য উঠানামা বিঘ্নিত হয়েছে জানিয়ে বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, “বহির্নোঙ্গরে ১৪০টির মত জাহাজ আছে। যেসব জাহাজের হেচ (পণ্য রাখার স্থান) খুলে পণ্য লোডিং-আনলোডিং করতে হয় সেগুলোতে কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। তবে বন্দরের জেটিতে থাকা কন্টেইনারবাহী জাহাজগুলোর কাজে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
এদিকে দুপুরে দমকা বাতাস শুরুর পর থেকে নগরীর কাজীর দেউড়ি, আসকার দিঘীর পাড়, এনায়েত বাজার, পশ্চিম মাদারবাড়ি, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অপারেটর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বৃষ্টিপাতে এখন পর্যন্ত কোনও বড় ধরনের কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সিআরবি সাত রাস্তার মোড় এলাকায় একটি গাছ উপড়ে পড়ে বলে আমরা খবর পেয়েছি। গাছটি সরিয়ে নিতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।’